২০২৫ সালের ৮ মে, বিল গেটস ঘোষণা দেন যে তিনি আগামী ২০ বছরের মধ্যে তার ব্যক্তিগত সম্পদের প্রায় ৯৯% — প্রায় ২০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার — দান করবেন। এই উদ্যোগটি কেবল ব্যক্তিগত দানের ইতিহাসে নতুন রেকর্ড স্থাপন করেনি, বরং এটি তার দুই দশকেরও বেশি সময়ের দাতব্য কর্মকাণ্ডের এক উচ্চতম মুহূর্ত হিসেবে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
প্রযুক্তি ও জনকল্যাণের সংযোগস্থলে, বিল গেটসের নাম উজ্জ্বলভাবে জ্বলজ্বল করছে। মাইক্রোসফটের সহ-প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে তিনি একসময় বিশ্বের ধনী ব্যক্তিদের একজন ছিলেন; কিন্তু তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, তিনি "সম্পদ" শব্দটির সংজ্ঞা নতুনভাবে নির্ধারণ করেছেন — শুধু অর্জন নয়, বরং ফিরিয়ে দেওয়া। ধারাবাহিক ও বিশাল আকারের অনুদানের মাধ্যমে, তিনি তার সম্পদকে বৈশ্বিক স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও দারিদ্র্য বিমোচনের এক শক্তিশালী ইঞ্জিনে পরিণত করেছেন। এই প্রবন্ধে আমরা তার দাতব্য অভিযানের গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলকগুলি পর্যালোচনা করব এবং দেখব কীভাবে তার কৌশলগত বিনিয়োগগুলি বৈশ্বিক কল্যাণ ব্যবস্থাকে নতুনভাবে গড়ে তুলছে।
এক দাতব্য মহাশক্তির জন্ম: ২০০০ সাল
২০০০ সালে, গেটস ও তার তৎকালীন স্ত্রী মেলিন্ডা মিলে প্রতিষ্ঠা করেন বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন, যার প্রাথমিক তহবিল ছিল প্রায় ১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এই প্রতিষ্ঠানটি দ্রুতই বিশ্বের সবচেয়ে বড় ব্যক্তিগত দাতব্য সংস্থায় পরিণত হয়, যার লক্ষ্য ছিল বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিদ্যমান অসমতাগুলো দূর করা।
গেটস তার প্রযুক্তি খাতের ব্যবস্থাপনার দক্ষতা — সিস্টেমেটিক থিংকিং ও ডেটা-চালিত সিদ্ধান্ত — দাতব্য খাতে নিয়ে আসেন এবং একটি ফলাফলভিত্তিক নতুন জনকল্যাণ মডেল গড়ে তোলেন।
শুরুর সাফল্য: ২০০৪–২০০৬
২০০৪ সালে, ফাউন্ডেশন গ্লোবাল ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্স (GAVI)-এ ২০০ মিলিয়ন ডলার অনুদান দেয়, যা উন্নয়নশীল দেশগুলোতে টিকা বিস্তারের কাজকে শক্তিশালী করে। এটি ছিল জনস্বাস্থ্যে গেটসের গভীর সম্পৃক্ততার সূচনা।
২০০৬ সালে, গেটস মাইক্রোসফট থেকে ধীরে ধীরে অবসর নেওয়ার ঘোষণা দেন এবং তার জীবনের মূল লক্ষ্য দান-অনুদানে সরিয়ে নেন। একই বছর, বিনিয়োগ কিংবদন্তি ও ঘনিষ্ঠ বন্ধু ওয়ারেন বাফেট গেটস ফাউন্ডেশনে প্রায় ৩১ বিলিয়ন ডলার মূল্যের শেয়ার দান করার ঘোষণা দেন, যা ফাউন্ডেশনটির ক্ষমতা বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়।
“সবকিছু দান” এর মুহূর্ত: ২০০৮
২০০৮ সালে, গেটস ঘোষণা দেন যে তিনি তার ব্যক্তিগত ৫৮ বিলিয়ন ডলারের প্রায় সমস্ত সম্পদ ফাউন্ডেশনে দান করবেন। এই অভূতপূর্ব সিদ্ধান্ত বিশ্বজুড়ে বিস্ময় তৈরি করে। এই অনুদান ম্যালেরিয়া, এইডস, ও শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নসহ বহু গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়েছে।
"দান প্রতিজ্ঞা"র সূচনা: ২০১০
২০১০ সালের জুনে, গেটস ও বাফেট The Giving Pledge নামের এক আন্দোলনের সূচনা করেন, যার মাধ্যমে তারা বিশ্বের ধনী ব্যক্তিদের জীবদ্দশায় বা মৃত্যুর পর তাদের সম্পদের অন্তত অর্ধেক দান করতে আহ্বান জানান। এই উদ্যোগ সম্পদের বণ্টন সম্পর্কে সমাজের দৃষ্টিভঙ্গিকে বদলে দিয়েছে এবং শত শত ধনী ব্যক্তি এই প্রতিশ্রুতিতে স্বাক্ষর করেছেন।
বিশ্ব সংকটে প্রতিক্রিয়া: ২০১৪–২০২০
২০১৪ সালে পশ্চিম আফ্রিকায় ইবোলা মহামারির সময় ফাউন্ডেশন ৭৫ মিলিয়ন ডলার জরুরি প্রতিক্রিয়া ও টিকা গবেষণায় বিনিয়োগ করে।
২০২০ সালে কোভিড-১৯ মহামারির সময়, ফাউন্ডেশন শত শত মিলিয়ন ডলার ব্যয় করে, যার মধ্যে COVAX কর্মসূচিতে ১২৫ মিলিয়ন ডলারের অনুদান অন্তর্ভুক্ত ছিল — যার মাধ্যমে উন্নয়নশীল দেশগুলো টিকা পেতে সক্ষম হয়।
প্রতিশ্রুতির পুনর্ব্যক্তি: ২০২২–২০২৫
২০২২ সালে, গেটস ঘোষণা দেন যে তিনি আরও ২০ বিলিয়ন ডলার ফাউন্ডেশনে যোগ করবেন এবং তার প্রায় সমস্ত সম্পদ ভবিষ্যতে দান করবেন। তার কথায়, তিনি "ধনীদের তালিকা থেকে অদৃশ্য হতে চান"।
২০২৫ সালের ৮ মে, তিনি আবারও ঘোষণা দেন — আগামী ২০ বছরে প্রায় ২০০ বিলিয়ন ডলার দান করবেন। তার লক্ষ্য: স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও দারিদ্র্য বিমোচনে বৈশ্বিক প্রভাব তৈরি করা। একই সঙ্গে, তিনি চান যে ২০৪৫ সালের মধ্যে ফাউন্ডেশন সব অর্থ প্রকল্পে ব্যয় করে স্থায়ীভাবে বন্ধ হোক। এটি দান ও জনকল্যাণের ইতিহাসে এক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করে।
"প্রযুক্তি প্রতিভা" থেকে "মানবতার সমস্যার সমাধানকারী"
বিল গেটসের এই যাত্রা একটি সাফল্যপ্রিয় ব্যবসায়ী থেকে মানবতার দায়িত্ববান পথিক হয়ে ওঠার গল্প। তার অনুদান কেবল একটি আর্থিক কাজ নয়, এটি হচ্ছে সিস্টেমেটিক চিন্তাধারার বাস্তব প্রয়োগ — একটি বৈশ্বিক পরিবর্তনের কর্মসূচি।
সমালোচনার মুখে: নীরবতা নয়, কাজই উত্তম
অনেকে তার উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুললেও, একটিই সত্য স্পষ্ট: তিনি বাস্তব টাকা দিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে জটিল সমস্যাগুলোর সমাধানে কাজ করছেন। হয়তো সব সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়, কিন্তু তিনি মাঠে নেমেছেন — অন্যরা যখন চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে।
মানসম্মত কনটেন্ট তৈরি সহজ নয়। আরও ভালো AI ও বিশ্বঘটনার প্রবন্ধ পেতে ভিজিট করুন:
https://iaiseek.com/news