গত ২৪ ঘণ্টায় AI এবং প্রযুক্তি দুনিয়ায় একের পর এক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটেছে: স্যামসাং ২,৪৯৯ ডলারের TriFold ফ্ল্যাগশিপ উন্মোচন করেছে, আলিবাবা Qwen-Image পুরোপুরি ফ্রি করে দিয়েছে, অ্যাপলের AI প্রধান পদত্যাগ করেছেন, আর কোরিয়ার ইতিহাসে অন্যতম বড় ডেটা লিকের শিকার হয়েছে Coupang। নিচে পুরো সারাংশ তুলে ধরা হলো।

স্যামসাং ইলেকট্রনিক্স তাদের প্রথম TriFold স্মার্টফোন Galaxy Z TriFold ঘোষণা করেছে, যার দাম প্রায় ২,৪৯৯ ডলার এবং খুললে স্ক্রিন ১০ ইঞ্চি পর্যন্ত হয়। এটি ১২ ডিসেম্বর কোরিয়ায় বাজারে আসছে এবং ২০২৬ সালের প্রথম প্রান্তিকে যুক্তরাষ্ট্রে লঞ্চ হবে।
একই সময়ে, স্যামসাং-এর সেমিকন্ডাক্টর বিভাগ তাদের নিজস্ব মোবাইল বিভাগের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি মেমরি চিপ সরবরাহ চুক্তি করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। তারা কেবল ২০২৫ সালের চতুর্থ প্রান্তিকের DRAM সরবরাহে সম্মত হয়েছে।
মন্তব্য:
স্যামসাং-এর কৌশল যেন দুইদিকে টানছে—মোবাইল বিভাগ ২,৪৯৯ ডলারের সুপার-ফ্ল্যাগশিপ দিয়ে উচ্চাভিলাষ দেখাচ্ছে, অথচ সেমিকন্ডাক্টর বিভাগ কম দামে দীর্ঘমেয়াদি DRAM দিতে রাজি নয়।
২০২৫ সালের তৃতীয় প্রান্তিক থেকে AI সার্ভার চাহিদা, PC বাজারের পুনরুদ্ধার এবং স্মার্টফোন পুনরায় স্টকিং-এর ফলে DRAM দাম টানা তিন প্রান্তিক ধরে বাড়ছে। কিন্তু স্যামসাং-এর স্মার্টফোন ব্যবসার লাভ খুবই কম। দীর্ঘমেয়াদি সস্তা DRAM চুক্তি মানে হবে সেমিকন্ডাক্টর বিভাগকে কম-মুনাফার ব্যবসাকে ভর্তুকি দেওয়া।
বহু বছর ক্ষতির পর অবশেষে DRAM বাজার উঠেছে—এক্ষেত্রে সেমিকন্ডাক্টর বিভাগ উচ্চ-মুনাফার গ্রাহক চাইবে, নিজেদের মোবাইল বিভাগকে “ফ্রি সার্ভিস” দিতে নয়।
Galaxy Z TriFold কি সত্যিই জনপ্রিয় হবে?
আলিবাবা তাদের ইমেজ জেনারেশন ও এডিটিং মডেল Qwen-Image-এর বড় আপডেট ঘোষণা করেছে। নতুন সংস্করণে মাল্টিভিউ জেনারেশন, মাল্টি-ইমেজ ফিউশন এবং মাল্টিমোডাল রিজনিং-এ উন্নতি হয়েছে। এটি এখন Qwen অ্যাপে পুরোপুরি ফ্রি এবং সীমাহীন ব্যবহারের জন্য উপলব্ধ।
মন্তব্য:
আলিবাবা Qwen-Image-কে “ইউজার অধিগ্রহণের অস্ত্র” হিসেবে ব্যবহার করছে। Meta এবং Adobe যেখানে Pro ফিচার পেওয়ালের পেছনে রাখে, সেখানে আলিবাবা ঠিক উল্টো পথে—সীমাহীন ফ্রি ইমেজ জেনারেশন দিয়ে C-end AI বাজার দখল করতে চায়।
কিন্তু এর বিশাল খরচ আছে—ইমেজ জেনারেশন GPU-নির্ভর এবং অত্যন্ত ব্যয়বহুল। এভাবে দীর্ঘমেয়াদি ফ্রি ব্যবহার কতটা টেকসই? ভবিষ্যতে আয় হবে কীভাবে? এগুলো বড় প্রশ্ন।
অ্যাপল নিশ্চিত করেছে যে তাদের Machine Learning এবং AI Strategy বিভাগের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট Giannandrea পদত্যাগ করছেন। তিনি সাত বছর আগে গুগল থেকে অ্যাপলে যোগ দেন এবং সরাসরি CEO টিম কুককে রিপোর্ট করতেন। অ্যাপল এই পদে আর কাউকে নিয়োগ দেবে না।
মন্তব্য:
এটি সাধারণ নির্বাহী প্রস্থানের ঘটনা নয়—এটি অ্যাপলের AI কৌশলের স্থবিরতার ইঙ্গিত।
গুগল থেকে একজন বড় AI বিশেষজ্ঞকে নিয়োগ করেও অ্যাপল Siri-কে এগিয়ে নিতে পারেনি, AI টিমগুলো দীর্ঘদিন ধরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিল, আর ২০২৪ সালে চালু হওয়া Apple Intelligence প্রতিদ্বন্দ্বীদের তুলনায় পিছিয়ে ছিল—Google Gemini, Meta Llama, Microsoft Copilot-এর থেকে অনেক পিছনে।
অ্যাপল কি নতুন করে তাদের AI কৌশল শুরু করবে?
নাকি OpenAI, Baidu, Alibaba-এর মতো বাহ্যিক মডেলের ওপর আরও নির্ভর করবে?
দক্ষিণ কোরিয়ার বড় ই-কমার্স কোম্পানি Coupang ৩৩ মিলিয়নেরও বেশি ব্যবহারকারীকে প্রভাবিত করা বিশাল ডেটা লিকের কথা নিশ্চিত করেছে। তদন্তে জানা গেছে, আক্রমণটি ২৪ জুন বিদেশি সার্ভারের মাধ্যমে শুরু হয় এবং ১৮ নভেম্বর পর্যন্ত—মোট ১৪৭ দিন—ধরা পড়েনি।
কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, চীনা বংশোদ্ভূত এক সাবেক কর্মীর উচ্চ-অধিকারযুক্ত অ্যাক্সেস কী চাকরি ছাড়ার পরও বাতিল করা হয়নি। ফাঁস হওয়া ডেটার মধ্যে রয়েছে নাম, ইমেইল, ফোন নম্বর, ঠিকানা এবং আংশিক অর্ডার ইতিহাস।
মন্তব্য:
১৪৭ দিন ধরে আক্রমণ না ধরা পড়া দেখায় যে Coupang-এর নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণ অত্যন্ত দুর্বল। সাবেক কর্মীর কী সক্রিয় থাকা অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনায় গুরুতর ত্রুটি।
আরও উদ্বেগজনক হলো: একটি কী দিয়েই এত বিশাল পরিমাণ সংবেদনশীল ব্যবহারকারীর তথ্য পাওয়া গেছে—এটি অত্যন্ত কেন্দ্রীভূত এবং অনিরাপদ ডেটা আর্কিটেকচার ডিজাইনের ইঙ্গিত।
AI যুগে ডেটা যেমন সম্পদ, তেমনি দায়িত্বও। তা রক্ষা করার ক্ষমতাই নির্ধারণ করবে কোম্পানি কত দূর এগোতে পারবে।
Coupang-কে ব্যবহারকারীদের কত ক্ষতিপূরণ দিতে হবে?
বিস্তারিত দেখুন:
১ ডিসেম্বর · মাল্টিক্লাউড অগ্রগতি, SME Copilot, Tesla-র প্রতিভা ক্ষয়
সম্পূর্ণ বিশ্লেষণ:
২৯ নভেম্বর · Windows 11 ক্র্যাশ, Tesla Robotaxi সম্প্রসারণ, Apple বনাম ভারতের নিয়ন্ত্রক আইন
স্যামসাং-এর অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব, আলিবাবার আগ্রাসী C-end AI কৌশল, অ্যাপলের নেতৃত্ব সংকট, আর Coupang-এর নিরাপত্তা ব্যর্থতা—বিশ্বব্যাপী AI ইকোসিস্টেম খুব দ্রুত বদলে যাচ্ছে।
যত দ্রুত উদ্ভাবন বাড়ছে, ঝুঁকিও তত দ্রুত বাড়ছে।
হয়তো আগামীকালের শিরোনামগুলো হবে একেবারে অন্যরকম।